অ্যাজমা বা হাঁপানি কি?
অ্যাজমা হচ্ছে ক্রনিক ও জীবনসংশয়ী মারাত্মক একটি ফুসফুসের রোগ, যা আমাদের দেশে হাঁপানি রোগ হিসেবে পরিচিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই রোগ সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাওয়া যায়।
অ্যাজমা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Asthma থেকে, যার অর্থ হাঁপানো বা হাঁ করে শ্বাস নেওয়া।
হাঁপানি বলতে আমরা বুঝি শ্বাসপথে বায়ু চলাচলে বাধা সৃষ্টির জন্য শ্বাসকষ্ট।
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীর সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিশুসহ যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে। অ্যাজমায় মানুষ মারা যায় না বললেই চলে। কিন্তু সুচিকিৎসার অভাবে তারা বেশ কষ্ট পায়।
শীতকালে শুষ্ক ঠান্ডা আবহাওয়া বাতাসে উড়ে বেড়ানোয় ধূলিকণার আধিক্যে অ্যাজমার সমস্যা বেড়ে যায়।
কারণ
অ্যাজমার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে গবেষকরা ধারণা করেন, কিছু বংশগত ও পরিবেশগত কারণে অ্যাজমা হয়। সব বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত ঝামেলা বেশি হয়।
যাদের রক্তের সম্পর্কে কারও মধ্যে অ্যাজমা থাকে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এছাড়াও ঘরের উপাদানের থাকা ক্ষুদ্র কীট, ধুলাবালি, গাছ-আগাছা, ফুলের পরাগরেণু, পশুপাখির পালক, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি থেকে সংক্রমণ হয়ে থাকে।
কিছু উপাদান অ্যাজমা রোগের উৎপত্তি, আক্রমণ ও স্থায়িত্বকে বেশ প্রভাবিত করে থাকে, যাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান বলে। এই ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রোগীসংশ্লিষ্ট ও পরিবেশগত এই দুই ধরনের।
রোগীসংশ্লিষ্ট কারণ
বংশগত বা জেনেটিক: যদি মা-বাবার অ্যাজমা থাকে, তবে সন্তানের অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
এই রোগীদের অ্যাজমা ও অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত রোগ যেমন একজিমা, রাইনাইটিস বেশি হয়। তবে অ্যাজমা আক্রান্ত মা যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে এ রোগগুলোর আশঙ্কা কমে।
সাধারণত শিশু বয়সে ছেলেদের ও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বেশি অ্যাজমা দেখা যায়।
পরিবেশগত কারণ
অ্যালার্জেন: সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অ্যাজমার ঝুঁকি, যেমন পশুর লোম, আরশোলা, রেণু, ছত্রাক ইত্যাদি।
উত্তেজক: সিগারেটের ধোঁয়া, কারখানার উত্তেজক পদার্থ, ঠাণ্ডা বাতাস, রঙের ঝাঁজালো গন্ধ, মসলা, সুগন্ধি প্রভৃতি।
ওষুধ: অ্যাসপিরিন, ব্যথানাশক, বিটা বøকারস, হিরোইন প্রভৃতি।
এ ছাড়া টিনজাত ফলের, ভাইরাসজনিত শ্বাসনালিতে সংক্রমণ, দৈহিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম অ্যাজমা ট্রিগার করে থাকে, অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা : যেমন অট্টহাসি, কান্না ছাড়াও অ্যাজমার অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে।
কীভাবে বুঝবেন অ্যাজমা রোগের লক্ষণ —
#শ্বাসকষ্ট, সঙ্গে শুকনো কাশি(রাতে ঘুমানোর সময় কাশি বেড়ে যায়)।
#কফ থাকতে পারে।
#শারীরিক কর্মকাণ্ড যেমন হাঁটলে বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
#বুক ভার হয়ে থাকে।
#শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো আওয়াজ হয়।
#ধুলাবালি বিশেষভাবে ঘরের ধুলা, ঠাণ্ডা কিংবা গরমের কারণে শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট;
#হঠাৎ দম বন্ধ ভাব অনুভব করা
#ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি।
ঝুঁকি বোঝার উপায়:
সাধারণত অ্যাজমায় মৃতুুহার শতকরা ১ ভাগের নিচে। তবে অ্যাজমায় জীবন ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ নিম্নরূপ লক্ষণ থেকে বোঝা যায়।
#যদি রোগী শ্বাসকষ্টের জন্য এক নিঃশ্বাসে একটি পূর্ণ বাক্য বলতে না পারে।
#যদি রোগীর জ্ঞান স্বাভাবিক না থাকে বা অজ্ঞান হয়ে যায়।
#সোজা হয়ে বসে থাকার প্রবণতা থাকে।
#নাকের অগ্রভাগ নীল হয়ে গেলে।
#শ্বাস-প্রশ্বাস মিনিটে ৩৫-এর বেশি হলে।
#নাড়ি মিনিটে ১২০-এর বেশি হলে।
এসব লক্ষণ দেখা মাত্রই হাসপাতালে নেয়া দরকার।
হাঁপানি রোগ কতদিন থাকে?
হাঁপানি অনেকের জন্যই একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, বিশেষ করে যাদের এই রোগ প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরে শুরু হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাঁপানি অনেকসময় ভালো হয়ে যায় বা বয়ঃসন্ধিকালে অবস্থার উন্নতি হয়। তবে জীবনের পরবর্তী সময়ে রোগটি আবার ফিরে আসতে পারে।
উপসর্গুলো সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বেশিরভাগ মানুষই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবে যারা তুলনামূলকভাবে গুরুতর হাঁপানির রোগী, তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে রোগটি ব্যঘাত ঘটাতে পারে।
হাঁপানি রোগের চিকিৎসা কী?
#ইনহেলার পদ্ধতি: এটি সবচেয়ে উপকারী এবং আধুনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ওষুধ শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসনালিতে কাজ করে।
ফলে খুবই অল্প মাত্রার ওষুধ প্রয়োগে অধিক সুবিধা হয়। পাশাপাশি যেহেতু ওষুধ রক্তে খুব এণ করে আরোগ্য লাভ করে, আবার ইদানিং অনেক নামদারি হোমিও চিকিৎসক বের হয়েছে,তারা এজমা রোগীকে পেটেন্ট টনিক, মিশ্র প্যাথি দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকে তাদের কে ডা.হানেমান শংকর জাতের হোমিওপ্যাথ বলে থাকেন, রোগীদেরকে মনে রাখতে হবে, হাঁপানী কোনো সাধারণ রোগ না, তাই সঠিক চিকিৎসা পেতে হলে অভিজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ নিন।
কটা যায় না, ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না বললেই চলে। তবে রোগীকে এর ব্যবহার শেখানোটা একটু কঠিন।
#ট্যাবলেট অথবা সিরাপ : ওষুধ রোগীর রক্তে প্রবেশ করে ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে।
#নেবুলাইজার: তীব্র অ্যাজমার আক্রমণে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, নেবুলাইজার যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত না রাখলে এর মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয়.
# ইনজেকশন : অ্যাজমার মারাত্মক আক্রমণে স্টেরয়েড ইনজেকশন শিরায় দেওয়া হয়।
করণীয়/প্রতিরোধ (ওষুধবিহীন চিকিৎসা)
#অ্যাজমার ওষুধ বা ইনহেলার সবসময় হাতের কাছে রাখুন।
#ভিটামিন-এ জাতীয় খাবার, কলিজা, গাজরসহ শাক-সবজি ও মধু খাবেন।
#নিয়মিত চেকআপ করাবেন।
#নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
#ধূমপান ও ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন।
#বালিশ লেপ তোশক-পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।* ঘর-বাড়িকে ধুলোবালি থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করা। এজন্য দৈনিক অন্তত একবার ঘরের মেঝে, আসবাবপত্র, ভেজা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে অথবা ভ্যাকিউম ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে।
#ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করা।
#ঠাণ্ডা খাবার আইসক্রিম ইত্যাদি না খাওয়া।
#বাড়িতে পোষা প্রাণী (কুকুর, বিড়াল) থাকলে নিয়মিত গোসল করাতে হবে বা পরিচ্ছন রাখতে হবে।
#মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা এড়িয়ে চলতে হবে।
# আতর, সেন্ট, পারফিউম ব্যবহার না করাই উত্তম।
#অ্যালাজেন পরিহার : অ্যালার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলা অ্যাজমার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা অর্থাৎ যে জিনিসে অ্যালার্জি তা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা।
#ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে সে ব্যবস্থা করুন। রাতে ঘুমানোর সময় পর্যাপ্ত উষ্ণতায় থাকুন।
#দিনে বা রাতে কুয়াশায় চলাফেরার সময় নাক ঢেকে রাখুন (গায়ে পর্যাপ্ত শীতের কাপড় থাকলেও)।
#স্যাঁতসেঁতে বা ঘিঞ্জি পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা পরিবেশ ক্ষতিকর।
#রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় সম্ভব হলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
★ হাঁপানি রোগীর খাদ্য ও পথ্য
অ্যাজমা রোগীর খাবার: ১. কুসুম গরম খাবার, ২. মওসুমি ফলমূল, ৩. ছাগলের দুধ (তেজপাতা, পুদিনা ও কালোজিরা সহ), ৪. আয়োডিন যুক্ত লবণ ও সৈন্ধব লবণ, ৫. মধু, স্যুপ, জুস, ৬. কালোজিরার তেল. ৭. আদা ও পুদিনার চা।
অ্যাজমা রোগীর যে সব খাবার নিষিদ্ধ: ১. মিষ্টি দধি ও মিষ্টান্ন ২. ফ্রিজের কোমল পানীয় ৩. আইসক্রীম, ফ্রিজে রাখা খাবার ৪. ইসুবগুল ও গ্রেবী জাতীয় খাবার ৫. কচুর লতি, তিতা জাতীয় খাবার ৬. পালং শাক ও পুই শাক, মাসকলাই, মাটির নীচের সবজি যেমন-গোল আলু, মিষ্টি আলু, শালগম, মুলা, গাজর ইত্যাদি। এছাড়াও ইলিশ মাছ, গরুর গোশত, চিংড়ী মাছ ৭.পাম অয়েল, ডালডা ও ঘি। ৮. অধিক আয়রনযুক্ত টিউবঅয়েলের পানি।
★ হোমিও সমাধান
হোমিওপ্যাথি মতে তিনটি রোগ-বীজ হলো সব রকম অসুস্থতার কারণ। সোরা, সাইকোসি, সিফিলিস,সোরা -সাইকোসিস বা সোরা -সাইকোসিস-সিফিলিস মিশ্রভাবে এ্যাজমা রোগের জন্য দায়ী।
বর্তমান যুগের এই মিশ্র রোগ -বীজকে অনেকে টিউবারকুলার মায়াজম নামে নামকরণ করে থাকে, এই জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কে ডা. হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে সঠিক রোগীলিপি করণের মাধ্যমে যদি চিকিৎসা করা যায় তাহলে এ্যাজমা-সহ যে কোনো জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ভিওিক লক্ষণ সমষ্টি নির্ভর ও ধাতুগত ভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে চিরন্তন সত্য বলে কিছুই নেই । কেননা একসময় আমরা শুনতাম যক্ষা হলে রক্ষা নেই , বর্তমানে শুনতে পাই যক্ষা ভালো হয়। এ সবকিছু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ফসল ।
এজমা চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। সামগ্রিক উপসর্গের ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হয়। এটিই একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে রোগীর কষ্টের সমস্ত চিহ্ন এবং উপসর্গগুলো দূর করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।
বিবিসি নিউজের ২০১৬ তথ্য মতে, দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহহোমিও সমাধান সম্পর্কে লিখেছেন লেখক : ডা. মাহতাব হোসাইন মাজেদ (স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি। কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড